সিলেট

হবিগঞ্জে প্রযুক্তিনির্ভর শিম চাষে সফল শহীদের গল্প

প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫ ১১:৩৪

শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত শিম। অথচ বর্ষাকালে শিম চাষ করে দারুণ সফলতা পেয়েছেন কৃষক হাজী আব্দুস শহীদ। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার কামারগাঁও গ্রামে প্রায় ৩৩ শতক জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করে এই সাফল্য অর্জন করেন। শিম ক্ষেতে তিনি নিয়মিত পরিচর্যা করেন। তার দেখাদেখি উপজেলার আরও অনেক কৃষক এই জাতের শিম চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন।

কৃষক হাজী আব্দুস শহীদ জানান, আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় 'ক্রিপার' প্রদর্শনীর মাধ্যমে তিনি গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেন। গাছ থেকে শিম সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। পাইকাররা প্রতিকেজি শিম ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা দরে ক্রয় করেন।


তিনি আরও জানান, তিনি ‘সিকৃবি-১’ জাতের গ্রীষ্মকালীন শিমের বীজ এপ্রিল মাসে রোপণ করেন। শিম চাষে তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। জুন মাসের শেষ দিকে গাছে শিম আসা শুরু হয়। তখন থেকে শিম বিক্রি করে তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত শিম উৎপাদন চলবে বলে আশা করছেন, এবং সেই সময়ের মধ্যে আরও প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হবে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, বাহুবল উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের সার্বিক পরামর্শে তিনি এই চাষ করেছেন এবং এতে সফল হয়েছেন। তার সফলতা দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা বর্তমানে শিম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কৃষক শহীদের ছেলে আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সময় পেলে বাবার সঙ্গে শিম ক্ষেতে কাজ করেন। ভালো ফলন দেখে তিনি অত্যন্ত খুশি। শিম চাষে পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়ার জন্য তিনি কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।


স্থানীয় কৃষক মো. আরফান আলী বলেন, হাজী আব্দুস শহীদের অনুপ্রেরণায় তিনিও এ বছর ৩০ শতক জমিতে সিকৃবি-১ জাতের গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে এবং শিম বিক্রি করতে পারছেন। পাইকাররা প্রতি কেজি শিম ১৪০ থেকে ১৭০ টাকায় কিনে নিয়ে ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। অক্টোবর পর্যন্ত শিম বিক্রি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

বাহুবল উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, উপজেলায় সাধারণত শীতকালে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ হয়। তবে গ্রীষ্মকালীন চাষের জন্য সিকৃবি-১ জাতটি বিশেষ উপযোগী। এই জাতের শিম গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালের আবহাওয়ায় টিকে থাকতে পারে।

তিনি আরও বলেন, কামারগাঁও গ্রামে হাজী আব্দুস শহীদের মাধ্যমে এই শিম চাষে সফলতা এসেছে। এরপর মো. আরফান আলী, সমুজ আলী, আজগর আলী, নিজাম উদ্দিনসহ আরও অনেক কৃষক এই জাতের শিম চাষ করে ভালো ফল পাচ্ছেন।

তিনি জানান, এখানকার উঁচু জমিতে সাধারণত ধান ও অন্যান্য সবজির আবাদ হয়। বর্তমানে তার পরামর্শে অনেক কৃষক সিকৃবি-১ জাতের শিম আবাদ করছেন এবং ভালো ফলন ও বাজারমূল্য পাচ্ছেন।

বাহুবল উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চিন্ময় কর অপু বলেন, বাহুবলে আগে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ হতো না। এখন কিছু কৃষক উদ্যোগ নিয়ে শিম চাষ শুরু করেছেন এবং ভালো ফলনসহ ভালো দামও পাচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ আরও বাড়বে।

সিলেট থেকে আরো পড়ুন


বিজ্ঞাপন