জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় করা ১ হাজার ৭৩০টি মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫টি মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এক বছর পার হলেও মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এসব মামলার বাদীরা। তবে পুলিশ বলছে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে অনেক মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারা দেশে দায়ের ১ হাজার ৭৩০টি মামলার মধ্যে ৭৩১টি হত্যা মামলা এবং ৯৯৯টি মামলা অন্যান্য ধারায় দায়ের করা হয়। নিহতদের স্বজন এবং আহতরা বাদী হয়ে এসব মামলা করেন।
গত বছরের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশ সেই আন্দোলন দমাতে গুলি চালায়। এতে প্রতিদিনই হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে কোটাবিরোধী সেই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে। ওই বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
পুলিশ সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে হতাহতের ঘটনায় মামলা হলেও তাতে তথ্য লুকিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা ও তৎকালীন সরকারবিরোধী নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই মামলাগুলোর বেশিরভাগই ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। এরপর আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতরা বাদী হয়ে বিভিন্ন থানায় মামলা করেন। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা ও দলটির নেতাকর্মী ছাড়াও গুলি চালানো ও নির্দেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, দায়ের মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা মামলায় পাঁচটি এবং অন্যান্য ধারায় দায়ের ১০টিসহ মোট ১৫ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তদন্ত শেষে মানবতাবিরোধী কয়েকটি মামলার বিচার শুরু হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, পুলিশের তদন্ত শেষে চার্জশিট দেওয়া মামলাগুলোর মধ্যে শেরপুরে তিনটি হত্যা মামলা, কুড়িগ্রামে একটি হত্যা মামলা এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি হত্যা মামলায় চার্জশিট দেয়। গুলি ও আহতের ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া ১০টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনটি, সিরাজগঞ্জে দুটি, পাবনা জেলার একটি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে দুটি মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে দায়ের করা মামলার যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করার জন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মামলাগুলো তদারক করছেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব মামলা তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে।
তদন্তে ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় দায়ের মামলাগুলো অতিগুরুত্বপূর্ণ। তদন্তে যাতে কোনো ধরনের ভুল না থাকে এবং আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য সময় নিয়ে তদন্ত চলছে। পাশাপাশি মামলার আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারেও সময় লাগছে।
ঢাকার বিভিন্ন থানায় করা হত্যা মামলার একাধিক তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ হত্যা মামলায় নিহত ব্যক্তির রক্তমাখা জামাকাপড়, শরীর থেকে বের করা গুলি এবং সাক্ষী খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক মামলার ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত হয়নি। এসব ঘটনায় ভিডিও সংগ্রহ করে এবং প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে বের করতে সময় লাগছে। এজন্য মামলার চার্জশিট দিতেও বিলম্ব হচ্ছে।
জাতীয় থেকে আরো পড়ুন