সেখানকার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য বোধ হয় পাথরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে চলা পানি। কলকল শব্দে অশান্ত হয়ে নদীর বুকে মিশে যায় ঝরনার পানি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাটি দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:৫৪
চারপাশে ছড়িয়ে আছে সাদা পাথর। মনে হয় যেন, প্রকৃতি শুভ্র বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি। চারদিকে ঘিরে আছে ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়। তার উপরে যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এ ছাড়াও চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃতি। সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য। দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এই অপূর্ব স্থানটি উপভোগের জন্য ছুটে আসে সাদা পাথরের দেশে।
সাদা পাথর আবার কোথায়? নিশ্চয়ই এমনটিই ভাবছেন! সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ অবস্থিত। আর সেখানেই আছে সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে ‘সাদা পাথর’ নামক স্থানটি।
ভোলাগঞ্জ সীমান্তে প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উঁচু উঁচু পাহাড়। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা একদিকে ধলাই নদের পানির যোগানদাতা অন্যদিকে এই পানি প্রবাহই ভোলাগঞ্জের রূপের উৎস। সবুজ পাহাড়, মেঘের হাতছানি আর বর্ষার পাহাড়ি ঢলের সাথে নেমে আসা সাদা পাথর ধলাই নদের বুকে মিলে মিশে ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।
সাদাপাথর এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মত। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে চারপাশ ঘুরে আবার মিলিত হয়েছে। ধলাই নদীর পানির সাথে ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পাথর নেমে আসে। পাথর উত্তোলনকে সহজ করতে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নির্মাণ করা হয়। ভোলাগঞ্জ থেকে সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ এই রোপওয়ে চলে গেছে ছাতক পর্যন্ত, যা ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হত। বর্তমানে রোপওয়ের টাওয়ারগুলো কালের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। রোপওয়ে বন্ধ হলেও থেমে নেই পাথর উত্তোলন। এখনো অনেক স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকার উৎস এই পাথর উত্তোলন। ১০ নং ঘাট থেকে সাদাপাথর যাওয়ার পথে পাথর তোলা কিংবা ছোট নৌকায় পাথর বহন করে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়বে।
সারাবছরই সাদা পাথরের দেশে ঘুরতে যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময় এ স্থানের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মতো পানি থাকে না। তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।
আর বর্ষায় নদীর বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা ভরাট নদীর শোভা বাড়িয়ে দেয় হাজারগুণ। সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোতে নয়ন জুড়ায়। অনেকেই সাদা পাথর পর্যটন স্পটকে ছবিতে বিছনাকান্দি ভেবে ভুল করেন!
দেখতে একই মনে হলেও সামনাসামনি গেলে পার্থক্যটা চোখে পড়বে। সেখানকার সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য বোধ হয় পাথরের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে বয়ে চলা পানি। কলকল শব্দে অশান্ত হয়ে নদীর বুকে মিশে যায় ঝরনার পানি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাটি দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।
পর্যটন থেকে আরো পড়ুন