প্রকাশিত: ২১ মে, ২০২৫ ২১:৫৯ (শনিবার)
জুয়েল কলিন্দ'র গুচ্ছ কবিতা

ছবি: সারাবেলা

হৃদয়ের অভাব

দূর আকাশের প্রতিটি নক্ষত্র উজ্জ্বল হয়ে ওঠে
কতখানি ব্যক্তিগত অন্তর্দহনে!  
জানতে চায় না কেউ
কফোঁটা শিশির বিন্দুর সাথে মিশে আছে 
কফোঁটা মালির ঘাম? দৃশ্যত সবুজাভ
সুশোভিত ফুলেল বাগানে?

রোদ কিংবা বাতাসে শুকিয়ে যাওয়া 
যোনি ফাটা রক্তের দাগে লেগে থাকে
কুমারী মেয়েটার নারী হয়ে উঠার গল্প।
মাথা থেকে ঝরে পড়া প্রতিটি ঘামের 
ফোঁটার সংখ্যা বাবা লুকিয়ে রাখেন 
এক চিলতে উজ্জ্বল হাসির আড়ালে।

মা প্রাণান্ত চেষ্টায় আদর ভালোবাসায়
লুকিয়ে রাখেন সংসারের দুঃখ, অভাব, 
সুগন্ধি ফুল তবু লুকাতে পারে না
আপন স্বভাব।

ভাঙতে পারে যে অন্যের হৃদয়
হৃদয় বলে কিছু তার নেইতো বোধ হয়,
হৃদয়ের ভালোবাসা বোঝেনি যে মানুষ
চিরকাল থাকে তার হৃদয়ের অভাব।


অপেক্ষার পার্বণ

এক আকাশের নিচেইতো
আছি দুজন,
এক আকাশের চাঁদ-সূর্যের মতই
ঝুলছে দুটি মন
তবু দুটি মনে নেই আজ কোন 
অপেক্ষার পার্বণ।


হাহাকার

পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা 
বৃদ্ধির হারের সাথে
পাল্লা দিয়ে বাড়ে মনের দূরত্ব। 
যত বেশী দেহের ঘনত্ব 
তার চেয়ে বেশী একাকিত্ব।
বন্ধু, সভ্য হতে হতে
কোথায় চলেছি মূলত?
আর কত সভ্য হলে
মানুষ হবো বলতো?
সভ্য নয়রে কলিন্দ 
মানুষ হবার বাসনায়
হাহাকার, মনটা খুব পোড়েতো।


মায়ের মতন

আমার এ গতিহীন জীবনে যারা এসেছিল
তাদের জীবন হয়ত ভেসেছিল কোন কালে
মিশেছিল মিছিলের স্লোগানে;
জীবনের গানে, মানুষের প্রাণে, 
দিয়েছিল দোলা; খোলা জানালায়,
আধো আলেয়ায়, ভোরের পাখির মতন
পবিত্র হয়ে কত চরিত্র গেছে উড়ে।
বেদনার চাদর মুড়ে, পাতাল খুঁড়ে
তবু আজও শোকাহত প্রিয়জন কত!
এতো এতো মুখ চারিদিকে, থেকে থেকে
ফিরে চায় তবু নাই কেউ অবিকল মায়ের মতন। 


জীবনভিনয়

যান্ত্রিক জীবনের চাপে আন্ত্রিক বেদনার তাপে
খাপে খাপ মেলে না সব। রব ওঠে
মাঠে, ঘাটে, হাটে, খরা চৈত্রের দুপুর
মাঠের মত ফাটে কত মানুষের মন।
প্রতারণার ফাঁদে আটকে পড়ে কাঁদে
কত সাজানো জীবন! কতজন তার হিসাব রাখে?
নকল হাসিতে ফকল খুশিতে অপরের কাছে
বেদনা ঢাকে। প্রযুক্তির এ স্বর্ণ যুগেও বর্ণবাদী মানুষ 
ভালো থাকার পৌরাণিক মন্ত্র খোঁজে কিন্তু না বোঝে
জবাই করা তাজা পশুর মত সারা জীবন 
বেদনার ছুরিকাঘাতে কি ব্যথাতে নীরবে তড়পায় এ মন।