প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী, ২০২২ ১১:৪৪ (মঙ্গলবার)
প্রথম প্রহরেই জমজমাট জয়নুল মেলা

এ রকম অনেক মা–বাবার হাত ধরে, রঙিন জামা পরে মেলায় এসেছে শিশুরা। অনেকেই প্রথমবারের মতো। যদিও অংশগ্রহণে তরুণ আর নারীদের আধিপত্য ছিল বেশি।

মেলায় তরুণ আর নারীদের আধিপত্য ছিল বেশি

মেলায় তরুণ আর নারীদের আধিপত্য ছিল বেশি

কামরুল মিথুন

শীতের সূর্য তখন ঠিক ঠিক মাথার ওপরে। বুধবার, ঘড়িতে দুপুরে ১২টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভেতরটা তখন উৎসবের রঙে রঙিন। সেখানে প্রতিবছরের মতো এবারও চলছে জয়নুল আবেদিনের ১০৭তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে জয়নুল উৎসব।

জয়নুল উৎসব ২০২১ এ নকশী কাঁথা নিয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি

জয়নুল উৎসব ২০২১ এ নকশী কাঁথা নিয়ে অংশ নিয়েছেন তিনি 

কামরুল মিথুন

বিজ্ঞাপন

আজ বেলা ১১টা থেকে নেচে–গেয়ে, বাদ্য বাজিয়ে শুরু হয়েছে এই উৎসব। এর আগে শিল্পাচার্যের সমাধিতে অর্পণ করা হয়েছে পুষ্পের শ্রদ্ধা আর সম্মান। ভেতরে চারপাশজুড়ে সারি সারি দোকান।

সেখানে সিলেটের গামছা, চাদর, থ্রি–পিস, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, টেপা পুতুল, নারায়ণগঞ্জের হাতপাখা, মাগুরার শোলাশিল্প, বিক্রমপুরের শীতলপাটি, নানা রকম বাদ্যযন্ত্র, পোশাকসহ আরও কত যে লোকজ শিল্পকর্ম!

চারুকলা অনুষদের প্রাঙ্গণজুড়ে যেন বাংলার লোকশিল্পের পসরা

চারুকলা অনুষদের প্রাঙ্গণজুড়ে যেন বাংলার লোকশিল্পের পসরা

কামরুল মিথুন

চারুকলা অনুষদের প্রাঙ্গণজুড়ে যেন বাংলার লোকশিল্পের পসরা। আর ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্রেতা আর দর্শনার্থীদের সংখ্যা। মেলায় ছিলেন জয়নুল আবেদিনের ছেলে মাঈনুল আবেদিন ও তাঁর পরিবার।

খোলা মাঠও থাকেনি ফাঁকা

খোলা মাঠও থাকেনি ফাঁকা 

কামরুল মিথুন

 

মাঠের একটা পাশজুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কারুশিল্পীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কাপড় আর শোলার পাখাগুলোর দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। টেপা পুতুলের দাম ২০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। বাদ্যযন্ত্রগুলোও আছে বিভিন্ন দামের।

টেপার পুতুল

টেপার পুতুল 

কামরুল মিথুন

একতারার দাম দেড় শ থেকে তিন শ। অন্যদিকে চারুকলার বারান্দাজুড়ে দোকান দিয়েছে এই অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ আর বর্ষের শিক্ষার্থীরা। সেখানে আছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কারুশিল্পীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কারুশিল্পীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন

কামরুল মিথুন

সেখানে বিক্রি হচ্ছে এই শিক্ষার্থীদের হাতে বানানো মাটির সরা। সরাতে আঁকা রিকশা পেইন্টিং, শিক্ষার্থীর হাতে আঁকা ১৮৮৯ সালে ভ্যান গঘের বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘হুইট ফিল্ড উইথ সাইপ্রেসেস’, ফুলের বাগান, ফুলদানিতে ফুল, নারীর প্রতিকৃতিসহ আরও নানা কিছু। আকার আর আঁকাভেদে সেগুলোর দাম ৪০০, ৬০০ আর ১০০০ টাকা।

আকার আর আঁকাভেদে সরাগুলোর দাম ৪০০, ৬০০ আর ১০০০ টাকা

আকার আর আঁকাভেদে সরাগুলোর দাম ৪০০, ৬০০ আর ১০০০ টাকা

কামরুল মিথুন

এ ছাড়া ভিড় বেশি হাতে বানানো নানা কিছু দিয়ে তৈরি গয়না, চুলের কাঁটা, টিপ, ব্যাগ আর অন্দর সাজানোর উপকরণে। এসব স্টলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন এই অনুষদের শিক্ষকেরা। বেচাবিক্রি ভুলে শিক্ষকদের কোল থেকে বাচ্চাদের নিয়ে খেলছেন তিন দিনের দোকানদার শিক্ষার্থীরা।

সব মিলিয়ে জয়নুল উৎসবের এই অংশটি পরিণত হয়েছে বর্তমান, প্রাক্তন ছাত্র আর শিক্ষকদের মিলনমেলায়

সব মিলিয়ে জয়নুল উৎসবের এই অংশটি পরিণত হয়েছে বর্তমান, প্রাক্তন ছাত্র আর শিক্ষকদের মিলনমেলায়

কামরুল মিথুন

শিক্ষকেরাও দরদাম ছাড়াই কিনছেন তাঁদের ছাত্রদের বানানো এসব শৈল্পিক উপকরণ। সিনিয়র–জুনিয়ররা চা হাতে জুড়ে দিয়েছেন আড্ডা। সব মিলিয়ে জয়নুল উৎসবের এই অংশটি পরিণত হয়েছে বর্তমান, প্রাক্তন ছাত্র আর শিক্ষকদের মিলনমেলায়।

শিক্ষকেরাও দরদাম ছাড়াই কিনছেন ছাত্রদের আঁকা ছবি আর শৈল্পিক সব উপকরণ

শিক্ষকেরাও দরদাম ছাড়াই কিনছেন ছাত্রদের আঁকা ছবি আর শৈল্পিক সব উপকরণ

কামরুল মিথুন

এক শিক্ষক তো পুরোনো এক ছাত্রকে চিনেই ফেললেন। বললেন, ‘এই তোমার রেজাল্ট তো খুব ভালো ছিল। তুমি কোথাও জয়েন (শিক্ষক হিসেবে) করলে না?’ উত্তর এল, ‘স্যার, আমি কাজ করতে চাই। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আঁকি, ডিজাইন করি। বিভিন্ন হাউস থেকে কিনে নেয়। নিজেও টুকটাক বিক্রি করি। “মাস্টারমশাই” হতে ইচ্ছা করে না স্যার।’ তবুও থেকে গেল সেই শিক্ষকের আক্ষেপ, ‘তোমার টেকনিকগুলো তো তোমার সঙ্গে চলে যাবে। এগুলো তো ছাত্রদের শিখিয়ে যাওয়া উচিত।’  

ছিল শঙ্খ আর শঙ্খের তৈরি নানাকিছু

ছিল শঙ্খ আর শঙ্খের তৈরি নানাকিছু 

কামরুল মিথুন

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বাদ্যকর শিশিরের মাঠের একটা অংশে কম ভিড় দেখে সেখানে বাজাতে শুরু করলেন ঢাক আর ঢোল। ব্যস, শুরু হয়ে গেল ‘ভিড়ের সমসত্ব বণ্টন’! কেনাকাটা ভুলে মানুষকে টানল খোলা মাঠ।
প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে মেলা। শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।

হরেক রকম রঙিন পাখা

হরেক রকম রঙিন পাখা 

কামরুল মিথুন